প্রত্যয় নিউজ ডেস্কঃ মালয়েশিয়ার পর এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতামত প্রকাশের ব্যাপারে কঠোর হতে যাচ্ছে সৌদি সরকারও। ইকামায় বর্ণিত কাজের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া যেসব বাংলাদেশি সৌদি আরবে সাংবাদিকতা করেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণ হলে জেল জরিমানাসহ তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয় বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূতকে। সেখানে এসব বিষে সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে দেয়া হয়।
পরে সৌদি দূতাবাসের জারি করা এক নোটিশে জানানো হয়, এতদ্বারা সৌদি আরব প্রবাসী সব বাংলাদেশি অভিবাসীদের জানানো যাচ্ছে যে, কতিপয় অভিবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের সৌদি আরবে বিভিন্ন নামে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার ও কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হয়েছে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করার জন্য গত ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত তামিম বিন মাজেদ আল দোসারির নেতৃত্বে মিনিস্ট্রি অব ইন্টিরিয়র, ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট ও অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সির প্রতিনিধিদলের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানায়। ওই বৈঠকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ কমিউনিটির কিছু সদস্য তাদের ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে সৌদি আরবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরনের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সতর্ক করেন যে সৌদি আরবে যে সব বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তার বাইরে এখানে কোনোপ্রকার রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরনের অন্য যেকোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার বা কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অথবা কোনো সাংবাদিক সম্মেলন করার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সৌদি আরবের আইনে গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সৌদি আরবে বসবাসরত যে কোনো অভিবাসী তার ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বৈঠকে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে কমিউনিটির কোনো ধরনের সংগঠনকে কোনো প্রকার স্বীকৃতি, অনুমোদন, আশ্রয়, প্রশ্রয় প্রদান করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ছাড়া যে সব বাংলাদেশি নাগরিকরা সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রেও এসব অপরাধের জন্য জেল জরিমানাসহ দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্মুখীন করা হবে বলে জানানো হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এ সব বিষয়সমূহ যথাযথভাবে মেনে চলার লক্ষ্যে সব বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবহিত করার বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশ প্রদান করেছে। বর্ণিত বিষয়ে কেউ অপরাধ করলে দূতাবাস বা কনস্যুলেট তার কোনোরূপ দায়ভার গ্রহণ করবে না।
এমতাবস্থায় সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সকল প্রবাসী বাংলাদেশির কাছে অনুরোধ করা হলো।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে মতামত প্রকাশের দায়ে মালয়েশিয়ায় রায়হান কবির নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন সৌদি আরবের নতুন সতর্কবার্তায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলো।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন